উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শেষে জনপ্রিয় হবে রেল ভ্রমণ, প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে সরদার শাহাদাত আলী

Yasin Hoque    |    ০৩:২২ পিএম, ২০২১-০১-১২


উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শেষে জনপ্রিয় হবে রেল ভ্রমণ, প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে সরদার শাহাদাত আলী

রেলের চলমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, রেল ভ্রমনে যাত্রীদের কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়া, পরিবহন বিভাগের উন্নয়ন ও রেলওয়ে বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো, এবং ট্রাফিক বিভাগের স্বচ্ছতা জবাবদিহীতা নিশ্চিতকল্পে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের মুখামোখি হলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তাঁহার কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার উপর আস্থা রেখে সাম্প্রতিক সময়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক থেকে পদোন্নতি দিয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এর দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেন প্রতিবেদক মো. ইয়াছিন হক। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েস: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন।

সরদার শাহাদাত আলী: ওয়ালাইকুম সালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এক মাস হলো। এডিজির কঠিন দায়িত্ব এ সময়ে কতটা সহজ করতে পেরেছেন? কেমন কাটছে? 

সরদার শাহাদাত আলী: কঠিন বলতে কিছু না। আমি ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের লোক। এই ডিপার্টমেন্টে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, অতীতের সকল অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রেল উন্নয়নে যখন যে নির্দেশনা আসবে সেই নির্দেশনা পালনে সচেষ্ট থাকব। আমার ওপর আস্থা রাখায় মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ এ সময়ে রেলের ট্রাফিক বিভাগের কি কি সমস্যা আপনার নজরে এসেছে?

সরদার শাহাদাত আলী: মূল সমস্যা হলো অনেক গুলো স্টেশন মাষ্টারের অভাবে বন্ধ আছে যার কারনে ষ্টেশন অতিক্রম করতে ট্রেনের গতি কমিয়ে আনতে হয়, এর ফলে যাত্রীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে থাকে,এগুলো সমাধানের কাজ করছি।নতুন নিয়োগ বিধি চলে আসছে,ষ্টেশন মাষ্টার নিয়োগ হলে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া প্রয়োজনীয়তার তুলনায় ইঞ্জিন কম থাকাটা একটা সমস্যা। তাছাড়া আখাউরা-লাকসামের ডাবল লাইনের কাজটা শেষ হয়ে গেলে ট্রেন পরিচালনা আরও উন্নত হবে বলে আমি মনে করি। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ প্রতিনিয়ত শিডিউল বিপর্যয়ের কারনে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।এটার সমাধান কি?

সরদার শাহাদাত আলী: শিডিউল বিপর্যয়ের সমস্যা এখন আগের মত নেই। হয়তো ঘন কুয়াশার কারনে মাঝে মধ্যে হয়। ট্রেন চালাতে গেলে কিছু বাধ্যকতা তো থাকেই, ইঞ্জিনের কারনে, ষ্টেশন বন্ধ থাকায় এমন হয়। তবে বড় আকারে প্রতিনিয়ত এরকম এখন হয় না। তারপরেও যেই ট্রেন গুলো লেট হয় সেগুলোর সমস্যা নিয়ে আমরা চুলছেড়া বিশ্লেষণ করি, সমস্যা উদঘাটন করে যথাযত ব্যবস্থা নেই। কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীর ভুলের কারনে হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেই। এছাড়া যেই নতুন ইঞ্জিন আসছে সেগুলো তো এখনো আমরা পায়নি। এগুলো পেলে কিছুটা সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তখন যাত্রীদের আরও ভাল সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যাবে।

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ ট্রেন চলাচলের নথিপত্র (টাইম টেবিল বই অনুসারে) জানা যায়, পশিমাঞ্চলে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সকল আন্তঃনগর ট্রেন মিলিয়ে চলাচলের সময় বেড়েছে ৬৭ ঘন্টা ৫০ মিনিট। আর পূর্বাঞ্চলে সময় বেড়েছে ১২ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। সময় বৃদ্ধির তালিকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সুর্বণা এক্সপ্রেস এর মত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনও রয়েছে। তাহলে শিডিউল বিপর্যয় কি প্রতিনিয়ত ঘটনা হয়ে দাঁড়ালো না?

সরদার শাহাদাত আলী: না,না এখন তো আমাদের প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। রাজশাহী থেকে আখাউরা পর্যন্ত আমাদের প্রকল্পের কাজ হচ্ছে যার কারনে ট্রেনও চালাতে হচ্ছে আবার কাজ গুলো করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় পুরনো ব্রীজের কারনে অপারেশনের (ট্রেন পরিচালনা) সময় বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, উত্তর বঙ্গ থেকে দক্ষিন বঙ্গের থেকে আগের তুলনায় আরও ট্রেন চালু করা হয়েছে সেগুলোর কারনে দেখা যাচ্ছে যে, সব ট্রেন টঙ্গি আসার পরে সবগুলো এক মুখি হয়ে যায়। তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়। এখন ধরেন ঢাকা ট্রেন গুলোতে লাইন হচ্ছে দুইটা এখন মনে করেন এক সঙ্গে তিনটা ট্রেন ঢুকলে তখন কাকে নিবো? তখন একটা বসায় রাখতে হবে কিছু করার তো নাই। কারন লাইনের ধারন ক্ষমতার থেকে বেশি ট্রেন চলছে। আগে ট্রেন কম ছিল কিন্তু এখন ক্রমান্বয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু সেভাবে লাইন কেপাসিটি না বাড়ার কারণে এমন হয়। কিন্তু প্রতিদিন যে এমন বিলম্ব হচ্ছে তা নয়। এখন মাঝে মধ্যে ৩০-৪০ মিনিট দেড়ি হতে পারে কিন্তু তার জন্য তো ঝুকি নিয়ে দুর্ঘটনা তো করা যাবেনা। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ তাহলে ডাবল লাইন না করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? 

সরদার শাহাদাত আলী: এখন ধরেন নতুন কোচ আসলো তিন বছরের মাথায় কিন্তু লাইনের কাজ শেষ করতে সময় লাগলো চার বছর। তাহলে কোচ আসার পরে আরও এক বছর লাগলো লাইনের কাজ শেষ করতে। তাহলে এই এক বছর তো কোচ গুলো  বসায় রাখা সম্ভব না,রাজস্ব আয়েরও ব্যাপার আছে। আসলে লাইনের কাজ গুলো হয়ে গেলে এসব ঠিক হয়ে যাবে। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় চলাচল করা ট্রেন বা ইজারায় দেওয়া ট্রেন গুলো বেশি আয় করে যেমন ঢাকা-নারায়ানগঞ্জ রুটের ট্রেনটি যখন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হতো তখন প্রতিদিন এর আয় ছিল ২ লাখ টাকা তবে এখন সরকারী ভাবে এটি পরিচালনা করে প্রতিদিন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা কমে রেলের আয় হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এটার কারন কি? 

সরদার শাহাদাত আলী: ঢাকা-নারায়ানগঞ্জ সড়কে আগে যানজটের একতা বড় ধরনের সমস্যা ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগতো সড়ক পথে। কিন্তু এখন ফ্লাই ওভার চালু হওয়াতে ৩০-৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে সড়কে,তাই মানুষ সড়কে বেশি যাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারীতে যখন ছিল তখন কিছু সুবিধা ছিল যেমন তাদের প্রতিটি বগিতে লোক ছিল,প্রতিটা কোচে তারা চেকিং করতো। আমাদের তো এতো বেশি সংখ্যায় জনবল নেই তাই আমরা এরকম কার্যক্রম নিতে পারিনা।

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ বর্তমানে ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটের বিক্রি বন্ধ আছে তবুও অসংখ্য মানুষ ট্রেনে দাড়ায় যাতায়াত করছে। তাহলে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেন দেওয়া হচ্ছে না? এখানে কি সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না?

সরদার শাহাদাত আলী: মূলত যাত্রীদের ভ্রমণ স্বচ্ছন্দ ভাবে নিশ্চিত করার জন্য স্ট্যান্ডিং টিকিট বন্ধ করা হয়েছে। আপনি (প্রতিবেদক) বললেন সেই লোকতো ট্রেনে উঠতেছেই। উঠতেছে কারন আমাদের ষ্টেশন চতুর দিকে খোলা আছে অথবা তাদেরকে চেকিং করে কন্ট্রোল করার মতো আমাদের সেই কেপাসিটি নাই, জনবল নাই,সে কারনে হয়তবা এমন ঘটনা ঘটছে। তবে স্ট্যান্ডিং টিকিট দিলে কি হতো? স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া মানে তার একটা অধিকার তৈরি হওয়া তাকে বৈধতা দেওয়া তখন তো আমি তাকে নামাইতে পারবোনা। আর যখন আমি টিকিট দিবনা তখন সে হবে অবৈধ যাত্রী অর্থাৎ তখন তার সেই অধিকারটা থাকেনা ফলে আমরা তার বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারি। এ কারনে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে যাত্রীদের স্বচ্ছন্দ ভাবে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে।

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ অবৈধ যাত্রী প্রবেশ ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিবে?

সরদার শাহাদাত আলী: হ্যাঁ। এগুলোর জন্য আমরা যেই ষ্টেশন গুলা খোলা আছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে ঘেরাও করে ফেলবো। তখন টিকিট ছাড়া গেট দিয়ে কেউ ঢুকতে পারবেনা। তখন এসব সমস্যা আর হবেনা। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসঃ মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা নানান অনিয়মে জড়িয়ে পরায় যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে, বিষয়টি কিভাবে দেখেন? 

সরদার শাহাদাত আলী: আমরা মাঠ পর্যায়ে সব জায়গায় নির্দেশনা দিচ্ছি। মূল কাজ হচ্ছে তাদের মোটিভেট করা। ইনহাউজ ট্রেনিং করানো। তাদেরকে মোটিভেট করা যে মানুষের টাকায় আমরা চলি তাই তারা যেন মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যাবহার করে। এভাবে তাদের মোটিভেট করা হচ্ছে যখন তাদের মাঝে এই উপলব্ধি টা আসবে যে তারা সরকারী টাকায় জীবনযাপন করে সুতরাং সাধারন মানুষের প্রতি তাদের একতা দায়িত্ব আছে। যখন তাদের এই বোধটা আসবে তখন এমনেতেই পরিবর্তন চলে আসবে আশা করি। মানুষকে তো আর বরখাস্ত করেই সমস্যা সমাধান হবেনা। সাময়িক বরখাস্তও যেমন করতে হবে তেমন তাদের মোটিভেটও করতে হবে।

প্যাসেঞ্জার ভয়েস : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সরদার শাহাদাত আলী: প্যাসেঞ্জার ভয়েস কর্তৃপক্ষ ও সম্মানিত পাঠকগণকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। নিরাপদ নির্বিঘ্নে হউক রেল ভ্রমন এই কামনা সকলের জন্য। 

আরও পড়ুন >>> মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ ৪৯.১৫ শতাংশ সম্পন্ন

আরও পড়ুন >>> শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়া রেলের এডিজি মিয়া জাহানের অনিয়মের তদন্ত দুদকে

আরও পড়ুন >>> রেলের জমি কৃষিকাজের নামে দখল বাগিয়ে নিয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা করছে টিকে গ্রুপ